Sunday, June 15, 2014

চিকেন পক্সঃ

চিকেন পক্স একটি ছোয়াচে রোগ যা varicella virus এর কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত টীকা দেয়া হয়েনি এরকম বাচ্চাদের এই রোগ হয়। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষন প্রকাশ পায়। এই রোগে সারা শরীরে ছোট ছোট পানি যুক্ত লালচে গোটাউঠে। সাথে সাথে জ্বর, মাথা ব্যথা, দূর্বলতা ও শরীরে ব্যথা দেখা দেয়। তবে এটির সঙ্গে থাকা চুলকানিই মূলত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। চুলকাতে গিয়ে গোটা ফেটে গিয়ে এর অভ্যন্তরীন লিকুইড চারিদিকে ছড়িয়ে পরে সংক্রমন বাড়ায়। সাবধানে থাকলে এই রোগ কোন চিকিৎসা ছাড়াই আরোগ্য হয়।

>যা যা কম খাবেনঃ
• স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার যেমন চর্বি যুক্ত মাংস ও ফুল-ফ্যাট দুধ। এতে থাকা ফ্যাট প্রদাহ বারিয়ে সেরে ওঠাকে ধীর করে ফেলে।
• লেবু খাবেন না যদি মুখের ভিতর গোটা থাকে। লবনাক্ত ও ঝাল খাবার ও বাদ দিবেন।
• আরজিনিন নামক একটি এমাইনো এসিড, পক্স ভাইরাস এর জীবন প্রণালি কে সাহায্য করে। আরজিনিন যুক্ত খাবার যেমন চকোলেট, বাদাম এবং বীজ জাতীয় যে কোন খাবার খাবেন না।

>যা খাবেনঃ
• সাধারণ ভাত, মাছ, মাংস খেতে পারবেন।
• সূপ খাবেন।
• ফল খেতে পারেন(মুখে ঘা থাকলে নরম ফল খাবেন, টক ফল খাবেন না)।
• দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করবেন।
• লাইসিন নামক একটি এমাইনো এসিড, আরজিনিন এর প্রভাব কাটাতে সাহায্য করে। লাইসিন পাবেন ডাল এ। তাই নিয়মিত ডাল খাবেন।

>সংক্রমনঃ
নিম্নের বস্তুগুলো দ্বারা আপনিও সংক্রমিত হতে পারেন-
• আক্রান্ত ব্যক্তির পক্স হতে নির্গত রস বা খোসা
• আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি-কাশি
• আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে একই বাথটাব/সুইমিংপুল এ গোসল করলে।

>পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ
• হালকা গরম পানিতে গোসল করুন।
• সাবান পানি দিয়ে পক্স ধুতে পারবেন।
• বিদেশে পক্সের এর চুলকানি রোধে খুব জনপ্রিয়ী একটি প্রথা হলো গোসলের পানিতে ওটমিল পাউডার এর ব্যবহার। এক বাথ টাব হালকা গরম পানিতে দুই কাপ ওটমিল পাউডার ভিজিয়ে রেখে তা দিয়ে গোসল করতে পারেন। চুলকানি কমবে। ওটমিল এ silicon, avenanthramides এবং beta-glucan থাকে যা চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। একই পদ্ধতিতে বেকিং সোডাও ব্যবহার করতে পারেন (এক বাথটাবে এক কাপ)।
• গোসল শেষে বেশী চেপে মুছতে যাবেন না। বাতাসে শুকিয়ে নিন।
• চুলকানি কমাতে বেবি ওয়েল, ওলিভ অয়েল বা calamine lotion ব্যবহার করতে পারেন।
• চুলকালে নখ লাগাবেন না। নিম গাছের পাতা দিয়ে আলতো করে চুলকানো দেশীয় মেডিসিনের একটা অংগ। খুব সম্ভবত নিমের এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুনের কারণে এমনটা করতে বলা হয়।

>চিকিতসাঃ
ডাক্তারের পরামর্শে পেইন কিলার (মাসল পেইন এর জন্য), এন্টিভাইরাল ড্রাগ (ভাইরাস প্রতিরোধে) এবং এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ (চুলকানি রোধে) খেতে পারেন।

>দাগ মোচনঃ
• নিয়মিত ভিটামিন ই ওয়েল এবং এলোভেরা জেল (ঘৃতকুমারি) লাগাতে পারেন।
• সিলিকন যুক্ত যে কোন ক্রীম দাগে লাগাতে পারেন।
• ওট এর পেস্ট (গরম পানিতে ওট ভিজিয়ে রেখে ডলে নিন) লাগাতে পারেন।
• তাছাড়া কেউ কেউ বলে ডাবের পানি এবং মধু ও দাগ নির্মূলে সহায়তা করে।

>প্রতিরোধঃ
১৯৯৫ সালে চিকেন পক্স এর টীকা আবিষ্কৃত হয়য়। বাচ্চারাদের কে প্রথম ডোজটি ১২-১৮ মাসের মধ্যে দিন। দ্বীতিয় ডোজটি ৪-৬ বছরে দিতে হয়। কারো যদি টীকা দেওয়া না থাকে এবং চিকেন পক্স হয়য়। লক্ষন প্রকাশের ৩ দিনের মধ্যে টীকা দিয়ে দিতে পারেন, রোগের প্রকোপ কমে যাবে। কারো একবার চিকেন পক্স হয়ে গেলে আর টীকার প্রয়োজন নেই। কারণ শরীরে তখন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অনেক এন্টিবডি তৈরী হয়ে যায় যা ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য শরীরে জমা থাকে।

>সতর্কতাঃ
• গর্ভাবস্থার প্রথম ছয় মাসে চিকেন পক্স হলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি (হাত-পায়ে ত্রুটি,ছোট মাথা, চোখে সমস্যা) ও দেখা দিতে পারে। তাছাড়া এই সময়ে আপনি ওষুধ ও খেতে পারবেন না। সুতরাং ডাক্তার এর নিবির তত্ত্ববধানে থাকুন।
• বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে কখনোই এসপিরিন খাওয়াবেন না। এটি থেকে অন্য একটি রোগ Reye's Syndrome এর উদ্ভব হতে পারে। এই রোগ থেকে শিশুর লিভার, ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে

No comments:

Post a Comment