Monday, September 23, 2013

হেপাটাইটিস সি

সংক্রমনঃ
বিশ্বে হেপাটাইটিস সি তে আক্রান্ত এর সংখ্যা এইডস এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দ্বিগুন।এর সংক্রমন ঘটে আক্রান্ত ব্যক্তির লালা ও রক্তের মাধ্যমে। সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একই টুথব্রাশ-রেজর ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে রক্তগ্রহন অথবা তার ব্যবহৃত সিরিঞ্জ বা সুই ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং, আপনার জানা মতে কারো হেপাটাইটিস সি আছে জানলে এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীর সাথে যৌনমিলনের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমন হয়না। মাত্র ১০% ক্ষেত্রে মায়ের কাছ থেকে গর্ভের সন্তান আক্রান্ত হয়। তাছাড়া সাধারণ ছোয়া, সাধারণ চুম্বন, একই থালা-বাটি (ধোয়া) ব্যবহার, বুকের দুধ, সর্দি-কাশির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় না।

ধরণ ও লক্ষনঃ
>হেপাটাইটিস সি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর ১৫% ক্ষেত্রে রোগের লক্ষন দেখা যায়। লক্ষনের মধ্যে আছে-
1. দুর্বলতা
2. অরুচি
3. বমি বমি ভাব
4. জয়েন্টে ব্যাথা
5. ওজন হ্রাস
কিন্তু হলুদাভ ত্বক-চোখ-মূত্র অর্থাৎ জন্ডিসের বহিপ্রকাশ থাকেনা। আপনার শরীরের সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এ সময় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে তা হটাতে চেষ্টা করবে। ১০-৫০% (এই ১৫% এর ১০-১৫%) ক্ষেত্রে সে সফল হয়ে যাবে এবং আপনি সুস্থ্য হয়ে যাবেন। এই ধরণের রোগকে বলা হয় acute hepatitis C।
>বাকী ক্ষেত্রে সে সফল হবেনা এবং এই ভাইরাস আপনার শরীরে পাকাপোক্ত হয়ে বসবে। একে বলা হয় chronic hepatitis C।আবার যে ১৫% এ রোগের লক্ষন প্রকাশ পেয়ে acute hepatitis C হয়েছে, তাদের বাদে বাকী ৭৫% এর সরাসরি chronic hepatitis C হয়। chronic hepatitis C এর রোগীদের ৯০% এরই বছরের পর বছর কোন লক্ষনই থাকেনা, তাই তারা জানেই না যে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত। অথচ নিজের অজান্তে সে অন্যদের মাঝে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে থাকে। পাশাপাশি নিজের অজান্তেই তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে এবং লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যান্সারে (Hepatocellular Carcinoma) পরিণত হয়। chronic hepatitis এর রোগীদের মাত্র ১০% এর ক্ষেত্রে নীচের লক্ষনগুলো দেখা যেতে পারে-
1. জ্বর
2. দুর্বলতা
3. হলুদাভ ত্বক ও চোখ
4. অরুচি
5. বমি বমি ভাব থাকা বমি হওয়া
6. কালচে মুত্র
7. কাদার মত বা সাদাটে মল
8. পেটে ব্যথা (উপরের দিকে, ডানে)
9.পেট ফুলে যাওয়া
10. চুলকানি

টেস্টঃ
ELISA, Liver Function Test, Albumin Test, HCV RNA Test ইত্যাদির মাধ্যমে সহজেই শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমনের প্রমাণ পাওয়া যায়। যারা chronic hepatitis C এ ভুগছেন, লিভার বায়োপসির মাধ্যমে জানা যায় যে, তাদের লিভার ভাইরাস দ্বারা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চিকিৎসাঃ
>হেপাটাইটিস বি এর মতই, এন্টিভাইরাল ড্রাগ ( peginterferon, ribavirin) দিয়ে এই রোগের চিকিতসা করা হয়। এই ওষুধের কাজ হলো শরীরে ভাইরাসের মাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা। সম্পূর্ণ ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে পারবে কিনা তা নির্ভর করবে রোগীর জীবন কাল এর উপর। এটি ধীরে ধীরে ভাইরাসের মাত্রা কমায়, কিন্তু একেবারে নির্মূল করার আগেই হয়তো রোগী মারা যায় যেহেতু এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকৃয়া। এই ওষুধ আবার সবার জন্য সমান কার্যকরীও না। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস এর তিনটি রূপ আছে, জেনোটাইপ ১, ২ এবং ৩,এই ওষুধগুলো জেনোটাইপ ২ এবং ৩ এর জন্য বেশী কার্যকরী। তাছাড়াও এসব ওষুধের অনেক প্বার্শ পতিক্রিয়া আছে। যেমন গর্ভবতী অবস্থায় ribavirin খেলে বিকৃত শিশু জন্মের সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনাকে সবসময় ডাক্তার এর তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ খেতে হবে এবং আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে লিভারের অবস্থা পর্যবেক্ষন করতে হবে। আপনাকে কে সবসময় যে কোন বিষাক্ত বস্তু বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। যে কোন ওষুধ, এমনকি হার্বাল হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
>চিকিতসার পাশাপাশি তাদেরকে হেপাটাইটিস এ এবং বি এর টীকা নিয়ে রাখতে হবে। কেননা তারা যদি পাশাপাশি এ বা বি তে আক্রান্ত হয়, তা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য তা মারাত্মক হুমকি স্বরুপ।
>যাদের ইতমধ্যে লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সার হয়ে গিয়েছে, তাদের একমাত্র চিকিতসা হলো লিভার প্রতিস্থাপন। তবে অনেক ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনের পরেও আবার ভাইরাস দেখা দিতে পারে।
>মায়ের কাছ থেকে সন্তান আক্রান্ত হলে, এর জন্য কোন চিকিতসা নেই।

প্রতিরোধঃ
এই রোগের এখন পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন বা টীকা নেই, সুতরাং সচেতনতাই পারে আপনাকে বাচাতে। নিচের বিষয়গুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করুন-
>যে কোন রক্ত নেয়ার আগে পরীক্ষা করে নিন।
>সিরিঞ্জ ব্যবহারে সবসময় নতুন সুই ব্যবহার করুন।
>ট্যাটু করার আগে নতুন সুই ব্যবহার করুন।
>সংক্রমিত ব্যাক্তির সাথে একই টুথব্রাশ-রেজার ব্যবহার করবেন না।
>সংক্রমিত ব্যক্তি কখনোই রক্তদান করবেন না।
>সংক্রমিত ব্যক্তির কোথাও কেটে গেলে, এক ভাগ ব্লিচ এর সঙ্গে ৯ ভাগ পানি মিশিয়ে তা দিয়ে পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার না করলে এমনি আধা শুকনো কাটা থেকেও অন্যেরা সংক্রমিত হতে পারে।
>যেহেতু যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় না, তাই আক্রান্তের স্বামী বা স্ত্রীর কোন বিশেষ প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা পায়ুপথে মিলন, যার ফলে পায়ুপথে আঘাতের মাধ্যমে রক্তপাত হতে পারে, সেইক্ষেত্রে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে (রাফ সেক্সের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য), অথবা যাদের অন্য কোন যৌনরোগ আছে যার ফলে মিলনের সময় রক্তপাত হতে পারে, সেইক্ষেত্রে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী এই দুই ক্ষেত্রে কন্ডোম ব্যবহার করবেন। স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারোও সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকবেন।
>মায়ের বুকের দুধ থেকে এটি ছড়ায় না, কিন্তু যাদের স্তন ফেটে রক্ত বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে বা বাচ্চার অভ্যাস আছে স্তন কামড়িয়ে রক্ত বের করার, তারা স্তন্যপান করানো হতে বিরত থাকুন।

No comments:

Post a Comment