Monday, September 23, 2013

স্তন্যদানের উপকারীতা"



>শিশুর জন্য উপকারঃ
National Institute of Environmental Health Sciences এর গবেষনা অনুযায়ী, মাতৃদুগ্ধ পান শিশু মৃত্যুর হার ২০% কমায়। মূলত শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল থাকে এবং বিভিন্ন জীবানুর আক্রমনে এই দূর্বল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে লড়াই করতে না পেরে শিশুরা মারা যায়। শিশুর শরীরে সংস্পর্ষে যেসব রোগ-জীবানু আসে, শিশুকে চুমু খাওয়া বা আদর করার মাধ্যমে তা মায়ের শরীরেও প্রবেশ করে। মায়ের শরীরে তখন এই জীবানুর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী হয়। মাতৃদুগ্ধ পানের মাধ্যমে এই এন্টিবডি শিশুর শরীরে আসে এবং শিশু তা দিয়ে রোগ-জীবানুর মোকাবেলা করে। মনে রাখবেন যে প্রত্যেক শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান শুধুমাত্র তার মায়ের দুধেই থাকে। বিভিন্ন গবেষনার ফল অনুযায়ী দেখা গিয়েছে যে, মাতৃদুগ্ধ পান কারী শিশুর ডায়রিয়া,নিউমোনিয়া, কান ও বুকের ইনফেকশন, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, একজিমা, এলার্জি এবং পূর্নবয়স্ক অবস্থায় ওবেসিটি (অতিরিক্ত ওজন) ও টাইপ ২ ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা মাতৃদুগ্ধ পান না কারী শিশুর তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর বুদ্ধির বিকাশও সঠিক হয়।

>মায়ের জন্য উপকারঃ
The National Institutes of Health, ৯০০০ টি গবেষনা পত্রের ফলাফল পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে স্তন্যদানকারী মা প্রসব পরবর্তী বিষন্নতায় কম ভোগেন। স্তন্য দান কালে অক্সিটোসিন নামক একটি হরমোনের মাত্রা শরীরে বেড়ে যায় যেটি মানসিক রিল্যাক্সেশন (প্রশান্তি) এর জন্য দায়ী। স্তন্যদানকারী মায়ের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা ৫০% যেখানে অন্য মায়েদের মাঝে এর মাত্রা থাকে মাত্র ৮%, তাছাড়া বিভিন্ন গবেষনায় প্রমান হয়েছে যে স্তন্যদানকারী মায়ের স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও স্তন্য না দানকারী মায়েদের তুলনায় কম। সন্তান গ্রহণের ফলে শরীরে যে বাড়তি মেদ জমা হয়, স্তন্যদান করলে তা আবার কমে যায়। কেননা মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনের কাঁচামাল এখান থেকেই আসে। সুতরাং স্তন্য দান করানোর মাধ্যমে গর্ভধারণের পরে আবার শরীরের স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসা সহজ হয়।

> ফরমুলা ফিডিং :
বাজারে যে সব গুড়ো দুধ পাওয়া যায় তাতে শিশুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দান কারী এন্টিবডি থাকেনা। গুড়ো দুধে প্রোটিন এর পরিমাণ মায়ের দুধের চেয়ে বেশী হলেও তা মায়ের দুধের প্রোটিনের মত সহজপাচ্য নয়। বুকের দুধ পান করা শিশু বারে বারে খেতে চায়, কারণ এতে থাকা প্রোটিন সহজে হজম হয়ে যায় ফলে শিশুর ক্ষিধে লাগে। বারে বারে খেয়ে হজম করে ফেলার ফলে শিশুর অপেক্ষাকৃত কম গ্যাস হয়। গুড়ো দুধে মিনারেল বেশী থাকলেও তা মায়ের দুধে থাকা মিনারেলের মত দ্রুত শরীরে শোষিত হয়না। শোষিত না হওয়া অতিরিক্ত মিনারেল অন্ত্রে জমে অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ব্যলেন্স নষ্ট করে দেয় (উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে যায় ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ে), তাই গুড়ো দুধ খাওয়া শিশুদের মল তুলনামূলক শক্ত ও দূর্গন্ধযুক্ত হয়। মায়ের দুধে আবার ল্যাকটোস এর পরিমাণও গুড়ো দুধের চাইতে বেশী। ল্যাকটোস শিশুর বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

>কখন স্তন্যদান করবেন নাঃ
মা যদি HIV বহনকারী হয়ে থাকেন তবে তা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুকেও সংক্রমিত করবে। তাই এই মাকে স্তন্যদান করাতে হলে অবশ্যই Antiretroviral (ARV) ওষুধ গ্রহণ করে তারপর করতে হবে।

>স্তন্যদানের নিয়মঃ
সব শিশুকে জন্মের প্রথম ঘণ্টা থেকে শুরু করে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ এবং ৬ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি উপযুক্ত বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। মায়ের দুধ খাওয়ানো দুই বছর পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। এই সময়টাতে মাকেও পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে।

No comments:

Post a Comment